হিমেল হাওয়া মাঙ্কি টুপি
কলকাতায় সেরকম শীত পরে না শুনি আজকাল, সেরকম করে নাকি কাক ভোরে কুয়াশা হয় না আগের মতো ,
আগের মতো মানে কত দুরের কথা সেসব , ওই যখন স্কুল এ পড়তাম সেই সব দিন আর কি , ভোরের স্কুল , ৬ টা ৫ এর প্রেয়ার , এক গ্লাস গরম দুধ আর মাঙ্কি টুপি। মনে নেই মিল্টন এর ওয়াটার বোতল পাওয়া যেতো , duckbag এর ব্যাগ , রাস্তায় জুতোর ফিতে খুলে গেলে বাবা নিচু হয়ে জুতোর ফিতে বেঁধে দিতো , মুখ দিয়ে ধোঁওয়া ছেড়ে বলতাম আমিও তোমার মতো সিগরেট খাচ্ছি , এই সব কত দিন আর আগের কথা , ছুটির দিনে আমার একতলা বাড়ির ছাদে রোদে দেওয়া সব লেপ তোষকের মাঝে সেই শুয়ে শুয়ে কমলালেবু খাবার দিন কি তবে শেষ বিকেলের শীত এর সাথে মিলিয়ে গেল. হতেই পারে না , এই তো কিছুদিন আগেও শীত পড়লে বাড়িতে একটা নেসকাফের ছোট কৌটো আসত , বাবা অফিস থেকে ফেরার পর মাঝে মাঝে আমিও ভাগ পেতাম , বিশ্বাস করুন এত সাহেব মনে হত না নিজেকে , ফেনা ওঠা নেসকাফে র থেকে ভালো কিছু আমি আর এ জন্মে খেয়েছি নাকি মনে করতে পারি না , যদিও আমারটাতে ভীষণ বেশি দুধ আর চিনি থাকত , তখন থেকে ছেলের জিভটা তৈরি হয়েছিল বলেই না সে আজকাল দেশে বিদেশে ঘুরে বেড়ায় , কায়দা করে star bucks এ গিয়ে মুখ বদলাতে সে আবার নাকি chai late খাচ্ছে, সে যখন জাপানে ছিল একবার green tea টা চেষ্টা করেছিল , পারে নি , কিন্তু সে হেরে যায় নি, কলকাতার শীত বুকের ভেতর কড়া নাড়লেই সে একটা chai late এ খেয়ে নেয়। আজ থেকে বছর ১৫ আগে মায়ের যে উলের শালগুলো ঝেড়ে পরে পাড়ায় আড্ডা দিতে বেরোত , তার গন্ধ ভেসে এলে সে hood টা মাথার ওপর টেনে নেয় , তবু এই হ্তছাড়ার দেশে ঠান্ডা কিছুতে মরে না। আজও মায়ের শাল থেকে একটু দুরে তার বইমেলা শুয়ে থাকে , টান টান ময়দান , ধুলো ধুলো আকাশ।
বইমেলা টাও দিক ভুল করে ধাপার দিকে চলে গেল, ইতিহাস হয়ে গেল জানেন, লিটল ম্যাগ হাতে কত গুলো ছেলের capstan এর প্যাকেট আর ৭ দিনের পাস পাওয়ার দিন, ওই পায়ের ছাপ আর হাওয়াই চটির দিন. ৫ টাকার ঘুগনি আর আলুর চপ ভাগ করে খাবার দিন , কলকাতায় কি তবে সেরকম শীত পরে না আজকাল।
শীত কাল বলতে একটা অবধারিত পিকনিক হত , সেই পাড়া পিকনিক , যেখানে মেয়েদের সাথে ব্যাডমিন্টন খেলার সুযোগ পাওয়া যেত বছরে একবার , খিচুরী হত মশাই, শেষের দিকে আমরা যারা পরিবেশন করে খেতে বসতাম , একটা দুটো ঠান্ডা বেগুনি আর হলুদ রঙের কিছু একটা জলের মতো, খিচুড়ি ভেবে খেতাম , তৃপ্তি ছিল কিন্তু , matador এ উঠেই মাথায় একটা মাফলার এর পুঁটুলি করে নিতাম , সুন্দর দেখাত কিন্তু আমাদের , উপায় ও তো ছিল না , কলকাতায় তখন ১২ আর মফস্বলে তো আরো ১ ডিগ্রী কম , হতেই হবে গাছ পালা কত বলুন ,
এই সব দেশে আবার মাইনাস ২০-৩০ টেম্পারেচার হয় , কি বোকা বোকা না বাপারটা , একটা চিরহরিত গ্রীষ্মপ্রধান দেশের মফস্বলের ছেলে কে আর কত আতলামো না নিতে হবে , কি আর করা যাবে , বিদেশ বলে কথা বাবা , ঠান্ডা কি কলকাতার মতো এত সস্তা হবে নাকি।
জানেন , সেই যে খুব ছোটবেলা যখন মা আমার বেশ সাজগোজ করত , আমি বাবা আর মা শীতের সকালে ময়দান যেতাম , গঙ্গার ধার, outram ঘাট , মায়ের হাতের বাঁধা রুমালে এখনো বোধয় সেদিনের কমলালেবুর গন্ধ পাবেন , আমার শীতকাল বুঝি আজকাল সেখানেই থাকে, ময়দানের বুক চিরে যে ট্রাম তা খিদিরপুরের দিকে যায় সে কিছু শীতকাল নিয়ে গ্যাছে আমার। কিছুটা ক্লাস ১২ এ জীবনানন্দ খেয়ে নিয়েছে ,
কিছুটা পরে আছে colleger সিঁড়িতে , সেই যেবার নীলকার্ডিগান , মুখে শীতের রোদ , মুগ্ধতা আর বোরলিনে মাখামাখি হয়ে কিছু শীতকাল পরে আছে সেখানে। কিছুটা তো বাবা নিয়ে চলে গেল তারায় ভরা আকাশের নিচে একা ফেলে , কিচুটা পার্ক স্ট্রিট এর নামে লিখে দিয়েছি , কিছুটা বড়দিন এর বেছে বেছে সব থেকে ছোট cake টাকে খাইয়েছি ,
কিছুটা বিলিয়েছি পাড়ার বন্ধুদের , বাকি টুকু শুধু নিজের শীত , যার ভাগ হয় না , যেটা অবুঝ কুয়াশার মতো নেমে আসে আর অসহায় বোঝায় , মন খারাপের ওপারে সান্তা ক্লস থাকে , তোমারও মোজা উপহারে ভরে যাবে একদিন , ঝকে ঝকে রোদ উঠবে খুব , সব কটা ফুটপাথ এর কুচো কাঁচার দল cake ভাগ করে খাবে , পার্কস্ট্রিটএ সেদিন বিকেল থেকে আলো জ্বলে উঠবে , সেদিন কেউ আর একা হেঁটে বাড়ি ফিরবে না , সেদিন আমি আমার সব কটা ডাকনাম ফিরে পাব আর আমার সব হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা এক পেগ বেশি খাবে আমার নামে , কে যে বলে কলকাতায় নাকি শীত পরে না আর ?