Monday, February 2, 2015

ফেলে আসা ধুমকেতু , মায়া কাজল


কালবৈশাখীর দিন , কালবৈশাখীর রাত

গরম কি তবে এসে গেল কলকাতায় ,  এখনো কি পশ্চিম লাল হয়ে এলে বুঝে নেব এই বার হাত ছাড়িয়ে উড়তে শুরু করবে বাদামের ঠোঙ্গা , ময়দান চত্তর ফাঁকা হয়ে যাবে, কেউ কেউ তুমি এলেই জানলা খুলে দেয়,ওটা তার বুড়ো  বয়সে উড়তে না পারার  আপসোস।

এখনো বুঝি জানলার ধারে বসে আছে, সম্পর্কে আমার দাদু হতেন তিনি। পা দুটো গ্যাছে কয়েক  বছর হলো  , এই না বলে কয়ে হটাত করে অর্বাচীন এর মতো ঝড় এলে এখনো কে জানলা বন্ধ করে, জানা নেই। অবশ্য তার দরকারও নেই , কালবৈশাখীতে ভিজতে ভিজতে সম্পর্কের নিম গাছটা  মাথা দুলিয়ে দেখে বিছানা টা ফাঁকা। গত বারে পুড়িয়ে এলাম যে, কালবৈশাখী মাঝে মাঝে সব গুলিয়ে দেয়. ওটা ওর পুরনো বদ অভ্যেস।

সে কি খুব করুন সুরে আসে আজকাল, সে কি খুব একা হয়ে যাচ্ছে , সেও কি আমদের মতো বন্ধুহীনতায় ভোগে , তার ও বুঝি বাতের ব্যথা , বহুদিনের সঙ্গী চলে গ্যাছে কথা না রেখে, দরজা হাট  করে খুলে, সেটাও কোনো কালবৈশাখীর দিনে,
কালবৈশাখীর রাতে, কি irresponsible, সেও কি  তাকিয়ে থাকে জানলার বাইরে, শ্যাওলা ধরা সবুজ দেওয়ালের দিকে , একা থাকে সে , বয়স হয়েছে , রাতে একটু একটু ভয় ও লাগে, কাগজে তো আজকাল কত কিছু বেরোয় , ছেলেটা বহুদিন বাইরে। কি করে কি খায়।
কালবৈশাখী আমার মায়ের কথা মনে পরায়।

আমার ও জীবনে কাল বৈশাখী  ছিল , আমারও  একটা গোটা বই মেলা ছিল।  আমাদের পাড়াএয়  কত রবীন্দ্র জয়ন্তী ভেস্তে  গেল এই বাজে ঝড়টার জন্য  , যে মেয়েটা সুর করে কবিতা পরেছিল , "কিনু গোয়ালার গলি " , কত দিনের কালবৈশাখীর বাবধ্যান তার সাথে আজকে আমার। কি পারাপারহীন করে গ্যাছে এই কালবৈশাখীর দিন , কালবৈশাখীর রাত.
হাতের মুঠোর থেকে ফসকে গ্যাছে রোদের দিন , বাবার আঙ্গুল, ফসকে গ্যাছে কত ক্যাম্বিস এর বল , সেএই সব বন্ধুদের কথা মনে পড়ায়  কালবৈশাকি , যাদের সাথে প্রথম বার মদ খেয়েছি , লুকিয়ে দেখেছি বড়দের সিনেমা , স্কুল কেটেছি বহুবার , সেই সব রেলগাড়ির কথা মনে পরায়, টিকিট ফাকি দিয়েছি , ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে থেকেছি অচেনা পাড়ায় , যদি সে আসে জানলআয় একবার।    কালবৈশাখীর দিন আমার প্রেমহীনতার কথা মনে পরায় , আজকে ঝাপসা কাঁচের বাষ্পে সেই সব বন্ধুদের কথা মনে পরে যাদের সাথে সত্যি আর কোনদিন দেখা হবে না , আমরা হারিয়ে গেছি সেই সব কালবৈশাখীর দিনে কালবৈশাখীর রাতে।


সুনীল গাঙ্গুলী চলে গেল। অসহায় কলকাতা  একা পরে আছে, তার ভাঙ্গা কালবৈশাখী , ভাঙ্গা ট্রাম লাইন ,
সারা জীবনের যত  কালবৈশাখী ছিল অধিকাংশ পুড়ে গ্যাছে , তার ছাই ওড়ে  প্রবাসী হাওয়ায় , মাঝে মাঝে নিবিড় জ্বরের মতো তার আনাগোনা , বুকের অনেক ভেতরে যেখানে বরফ থাকে , যেটা কাউকে বলা যায় না. যে সুর কোনদিন বাঁধা হবে না এরকম ভেতরে, এখনো মাঝে মাঝে পশিমের আকাশ লাল হয়ে আসে, হাত ছাড়িয়ে উড়ে যায় বাদামের ঠোঙ্গা , অসহায় ভিজতে থাকি আমরা, যাদের সাথে রোজ কথা হয় না , তাদের দেখআ  হয়ে যায় এরকম কোনো কালবৈশাখীর দিনে  আর কালবৈশাখীর রাতে।






3 comments:

  1. Darun hoeche bhai, lekha continue ko...
    Jab tak tera pen chalega, tab tak teri sans chalegi...

    ReplyDelete
  2. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  3. OnekOnek gulo kalboishaki pechone chole gelam... k bole durotto sudhu alokborshe mapa jaai..durotto kalboishaki teo hoi. Bhalo theko, erom bhalo likhte thako..

    ReplyDelete