Tuesday, September 15, 2015

পুজোর টুকিটাকি

আসছে বছর আবার এসো 

                                                       

হে ঈশ্বর , আবার  পুজো আসছে, এই সর্বগ্রাসী পুজো মানে অবধারিত ভাবে মন এত খারাপ থাকবে , সেই খুচরো খুচরো ডিপ্রেসন , কেন যে বাঙালি হয়ে জন্মেছিলাম কে জানে , আর কেন এই বা জীবনের এত পুজো মিস করে ফেললাম, তাও জানি না , শুধু  জানি যেহেতু মুখ তুলে এক আকাশ দু বার দেখা যায় না, ফেলে আসা পুজো দুবার ফিরে আসে না গুরু।

বেঙ্গালুরু দুবার খেয়ে ফেলল ,জাপান একবার র এইবার এই অভাগার দেশটা পুজোটা মেরে দিল , বছর ২৩ এর পুজো আর বছর ৩২ এর পুজো কি এক হয়, হয় না , তাই যা চলে যায় তা আর আসে না গো , এই সব ভাবলে মনে একটা হাহাকার হয় , যেমন হাহাকার হয়েছিল পুরনো পাড়া ছেড়ে দেবার সময়. সামনের পাড়ার পুজোটা তো আমদের বাড়ির পুজোই ছিল ,

তখন না পুজোর সময় একটা হালকা হাওয়া দিত মন কেমনের , আসলে তখন শুভ্র শরত্কাল আর তোমার কথার শঙ্খচিল।
আমি ছোটবেলায় অবধারিত ভাবে জানতাম পুজো আসে গঙ্গার দিক থেকে , আমার বাড়ি থেকে ১০ মিনিট হাঁটলে গঙ্গা পরে যে , যে জেটি তে বসে আড্ডা মেরেছি কত , সেই সব যদিও গত জন্মের কথা , পুজো ভাবলেই আমি জানি না আজও  কেমন আমার ওই নদী টার কথা মনে পরে , কি উদাসীন বয়ে যায় এই একটা বিরক্তিকর শহরের বুক চিরে , তার পেটের ভেতর ঘুমোয় কত জন্মের মা দুর্গার  ভুক্তাবসেশ ,

এই এক একটা ভাসান, এক একটা পুজো শালা কত ইতিহাস হয়ে  গেল , শহরও উদাসীন , সে যেন সরকারী চাকরি করে , এই কদিন সাজতে হবে, সাজে,  তারপর রং মুছে চোযাল শক্ত করে বছরের বাকিটা সময় কাটিয়ে দেয়. আমরাই শুধু পারলাম না , এখনো মহালয়ার রাতে জ্বর আসে, বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র এর গলা টিপতে ইচ্ছে করে , নিজের এর পেছনে লাথি মারতে ইচ্ছে করে , কিছু না করে বাড়ি ফিরে চুপ করে আর বাসন মাজা সম্ভব হচ্ছে না বস।

কিছুই তো পারি না তাই কবিতা লিখি নিজের ভাষায় , এই রকম কত লোক আছে ভাবলেই আজকাল হাসি পায় , মাথায় তাদের ছোটবেলার পুজো, কম্পিউটারএ কাশ ফুলের ওয়ালপেপার , যারা বাইরে আছেন তারা আবার আতলামো করে পুজোর দিনে মানিকদার ওই ছবিটা দেখবেন না কিন্তু। যেখানে আদিগন্ত মাঠে কাশ ফুল ছুঁয়ে দুটো ছেলে মেয়ে ছুটছে , "অপু রেল গাড়ি  দেখবি", বুকে গেঁথে যাবে , বহু  পেগ এর পর ও ওই নেশাটা নামে না  বস।  কত ছোটবেলা থেকে বলা হলো আমাকে, ভেব না, এত ভেব না তো তুমি। আর আমি কিনা না যে না ভেবে থাকতেই পারছি না।

আসলে coca cola থেকে cantharidin  অবধি এত অনিমেষ পুজো ঢুকিয়ে দেওয়া হলো না মাথায় আমি তাপস পাল হয়ে গেলাম , ছেলে ঢোকাতে না পারি পুজো ঢুকে গেল , আর একজন আমার মা , পুজোর দিন থেকে এত এত বার ওই জর্জদার "শরৎ তোমার অরুন আলোর অঞ্জলি " শোনালো , যে একবার ভাবলো না তার ছেলেটা বড় হয়ে বিদেশ যেতে পারে , তখন তার শোবার ঘরে মাঝ রাতে শরৎ এর মেঘ ঢুকে পড়বে ,একদম ঘুমোতে দেবে না , রোজ সকালে যে তাকে ক্লায়েন্ট প্যাদাতে হয় , তার কি এই সব বিলাসিতা মানায়।

বিলাসিতা না হয় করলাম না , বহুদূরের নিজের শহরে সব লোক ওই দিনে পুজো পুজো করে আদিখ্যেতা করবে তাই দেখে কি একটুও হিংসে হবে না বস এটাও মানতে পারলাম না , তাহলে বুঝব তুমি আর মানুষ নেই আশুতোষ রানা হয়ে গেছ , মাঝে মাঝে মনে হয় কই প্রবাসী পুজোতে তো এত মজা নেই, কিন্তু আন্তরিকতা তো কম থাকে না , এতগুলো মানুষ এতদিন ধরে এই প্রতিকূলতায় পুজো করে, ভাসান না হয় নাই থাকলো , আর ভাসানএ এমন কি বা হাতি ঘোড়া আছে , সেই তো পাড়ার পল্টু হালকা বাঙলা খেয়ে নাচবে, আর ফেরার পথে বাড়ি চিনতে পারবে না , হ্যা, এটাও সত্যি কথা প্রথম বার সেই বিকেলে ম্যাটাডোর এ ওঠার সময় সে কিন্তু তোমার এই হাত ধরেছিল, সে সব ক্লাস টেন, এই সব ফালতু কথা পুজোর সময় মাথায় না এলেই হলো।

আর সে সব কথা না ভাবাই ভালো , ছোটবেলার বিগত ৫ বছর পরপর ঢাকাই শাড়ি মুখ তুলে দেখল না মাইরি ,
এ পাশে অসুর আমি মূর্ছিত।  যাই হোক এখন লেভেল বেড়েছে , বিদেশে থাকে , ডলার কামায় , এখন হলে দেখিয়ে দিতাম এই সব ভেবে আমি কিন্তু বস হাত কামড়াই না পুজোর দিনে। আমি খুব লজিকাল , আমার মহালয়া CD আছে , আমার কাছে handy মা দুর্গার ছবি আছে , আমি নেট এ পুজো দেখে নেব।  আজকাল শিক্ষিত লোকেরা যা করে , আমি তো আর গ্রাম  এর মাল নই, পুজো এলেই হয়েছে, ঘাড়ে পাউডার মেখে বেরোব।

শুধু মাঝে মাঝে এখানেও বিকেল টা পুজো পুজো হয় , আকাশে ছেঁড়া ছেঁড়া মেঘ , বাতাসে অন্য গন্ধ, বুকের খুব ভেতরে পুজো আসে , বন্ধ চোখের ভেতরে এখনো মা এসে মহালয়ার দিন ঘুম থেকে তোলে খুব সকালে , এখনো বাবা বাজার থেকে এসে মাকে বলে, পুজোর দিন একটু চা খাওয়াবে না , আমাদের মধ্যবিত্ত বাড়িতে এখনো পুজোর দিনে লুচি হয় , এখনো বুকের অনেক ভেতরে যে বসত বাড়ির জন্য জমি কিনে রেখেছি, তার চারদিকে এই সময় কাশের বন, দুরে ঢাকের আওয়াজ , সেটা কিন্তু মৃত্যুর ওপার থেকে শোনা যায় ,

আমি হাটতে থাকি একা , পেছনে ত্রিভুজ এর মতো দেশ পরে থাকে, ত্রিসন্কুর মতো পরে থাকে চেনা শহর , সব চেনা আর অচেনা গলি গুলো তে বরফ পরে , চেনা বন্ধু ডাকনাম ধরে ডেকে ডেকে যায় , বাবা হাত বাড়িয়ে বলে  এই বার পুজোয় জুতো নিবি না কেন ? দুরে দুলতে থাকে মায়ের মুখ , সিঁদুর মাখা গঙ্গার জলে ভাসছে , সারা জীবন জুড়ে উড়তে থাকে কাপাস তুলোর মতো মেঘ. এই বুঝি পুজো ? এই বুঝি ভাসান ?











No comments:

Post a Comment